নাহ্ এটি কোনো ছোট্ট অ্যাকুরিয়াম নয় কিম্বা কোনো মৎস্য প্রদর্শনী ও বলা যাবে না। এটি হলো বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ-প্রাণীর বিশাল জগৎ। বলছিলাম কক্সবাজারের ঝাউতলায় অবস্থিত রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ডের কথা।
কি নেই এতে! চিংড়ি,কাকড়া হতে কচ্ছপ, স্কুইড আর হাঙর; যেগুলো ঘুড়ে বেড়াচ্ছে আপনার মাথার উপর দিয়ে। অর্থাৎ আপনি টানেলের মতো একটি রাস্তা দিয়ে যতই এগিয়ে যাবেন দেখতে পাবেন হরেক প্রজাতির সামুদ্রিক জ্যান্ত মাছ আর প্রাণী। গা শিউরে উঠবে যখন দেখবেন বড় বড় হাঙর মাছ আপনাকে কামড়াতে আসবে কিন্তু আপনি রয়েছেন মজবুত কাঁচে ঘেরা টানেলের ভেতর। ঠিক যেমন হাঙরের উপর নির্মিত হলিউড মুভি “The Meg” এর মতো !
রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ডের নিচতলায় প্রবেশ করতেই চোখে পড়বে বিশাল এক সামুদ্রিক কচ্ছপের ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্য। একটু এগোলেই বড় বড় ক্যাট ফিশ। আরেকটু সামনে বড় সামুদ্রিক কোরাল মাছের খুনসুঁটি। সামুদ্রিক ইল খাবি খাচ্ছে পানির নিচে। হরেক প্রজাতির চিংড়ির খেলাও দেখা যাবে। আছে লাল কাঁকড়া। মোহময় ভঙ্গিতে দেখা যাবে জেলি ফিশকে !
রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ডের ৪ তলা ভবনের ৩ তলা জুড়েই নান্দনিক শিল্পকর্ম সমৃদ্ধ ছোট-বড় শতাধিক অ্যাকুরিয়াম। বৈদ্যুতিক আলোয় ঝলমলে অ্যাকুরিয়ামের স্বচ্ছ পানিতে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে হাঙর, কোরাল, পিরানহা, মাইট্যা, কামিলা, হরেক রকমের অক্টোপাস, শামুক, জেলি ফিশ, লবস্টারসহ নানা প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ। টানেলের ভেতরে হাঁটতে হাঁটতে গেলে সেগুলোও যেনো পা মেলায়। অ্যাকুরিয়ামগুলোয় রাখা হয়েছে কৃত্রিম প্রবাল। সেই প্রবালের ফাঁকে ফাঁকেই নানা রং-বেরংয়ের মাছ সাঁতরে বেড়াচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ড অ্যাকুরিয়ামে বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ করা হয়েছে। তার মধ্যে ১৪০ প্রজাতির মাছ সামুদ্রিক। এছাড়া লোনা ও মিঠা পানির মিশ্রণে বেড়ে ওঠা মাছ আছে ২০ ধরনের। আর মিঠা পানির আছে ৩০ প্রজাতির। প্রতিনিয়ত নতুন মাছ সংযোজন করা হচ্ছে। কক্সবাজার শহরের ঝাউতলায় প্রায় ৮০ শতাংশ জমির ওপর তৈরি করা এধরনের ফিশ অ্যাকুয়ারিয়াম বাংলাদেশে এই প্রথম।
রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, এসব মাছ ও প্রাণী কোনোটাই দেশের বাইরের নয়। দেশের সমুদ্রকে সবার সামনে তুলে ধরতে এর সবই বঙ্গোপসাগর থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এখানে প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ৩০০ টাকা। এছাড়া লম্বায় তিন ফুট দৈর্ঘ্যের কম শিশুরা বিনামূল্যে প্রবেশ করতে পারে। এছাড়া এখানে রয়েছে থ্রিডি শো, যার প্রবেশ মূল্য ৫০ টাকা। প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে।
ফিশ ওয়ার্ল্ডে আসা দর্শনার্থী শম্পা মর্নিংনিউজ৪৯ কে বলেন, সাধারণত কক্সবাজারে এসে মানুষ সাগরের বিশাল ঢেউ দেখতে পায়, কিন্তু সমুদ্রের বিচিত্র মাছ আর প্রাণী দেখতে পায় না। তাই এধরনের অ্যাকুরিয়ামের কারণে মানুষ সাগরতলের রহস্যময় মাছ-প্রাণী সম্পর্কে জানতে পারছে। এখানে এসে নতুন এক অভিজ্ঞতা অর্জন করলাম।
পাঠকের সুবিধার্থে রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ডের ফেইসবুক এর লিঙ্ক দিয়ে দেওয়া হলোঃ https://www.facebook.com/radiantfishworldrfw/